শীত-প্রকৃতির রূপ

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - শিল্প ও সংস্কৃতি - NCTB BOOK

শীতের হাওয়ার লাগল চাচন, আমলকির এই তালে তালে - 

পাতাগুলি শিরশিরিয়ে, ঝরিয়ে দিল তালে তালে 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

শীত মানেই পাতা ঝরার গান। শীত আসার আগে যে গাছগুলোকে আমরা অসংখ্য সবুজ পাতায় ভরা দেখেছিলাম, শীতের আগমনে সে গাছগুলোর সবুজ পাতা ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে। শুকিয়ে হয়ে যায় ধূসর রঙের। এটি প্রকৃতিতে শীতের একটি রূপ। এই সময় কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে যায় চারদিক। ঘাসের উপর পড়ে থাকে শিশির বিন্দু। ভোরের প্রথম সূর্য আলো ছড়ায়। তার সাথে প্রকৃতিতে বুলিয়ে দেয় উষ্ণতার পরশ। এই সময় সূর্যের মতো উষ্ণতা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমরাও সকলকে জড়িয়ে রাখি ভালোবাসার উষ্ণতায়।

শীতের সময় হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে শীতের দেশের পাখিরা এসে ভিড় করে আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এদের অতিথি পাখি বলে। অতিথি পাখিদের ভিন্ন ভিন্ন আকার, আকৃতি, রং, বিভিন্ন রকমের সুর আর ভঙ্গি দেখে আমাদের মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এদের ভালোবাসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখাটাও আমরা শিখি আমাদের শীতের প্রকৃতির কাছ থেকে। তোমরা কি শীতের পিঠা-পুলি, খেজুরের রস খেয়েছ? শীতের সময় ঝরে পড়া শুকনো পাতার উপর দিয়ে হেঁটেছ? শুকনো পাতার উপর দিয়ে হাঁটলে তৈরি হয় এক ছন্দময় শব্দ।

এই সময় পাতাহীন গাছের ডালপালাগুলো দেখলে মনে হয় কোন শিল্পী প্রকৃতি জুড়ে এঁকে দিয়েছেন আঁকাবাঁকা হাজার রেখা। সে আঁকাবাঁকা রেখার পিছনে কুয়াশা ঢাকা চাঁদটা যখন মাঝে মাঝে উকি দেয় তখন তাকে ঘিরে তৈরি হয় এক আলো-আঁধারের গল্প। শীত-প্রকৃতির এই রূপটি এবার আমরা 'আনন্দধারা'র দেখা গাছটির মধ্যদিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করব।

 

এই অধ্যায়ে আমরা যেভাবে অভিজ্ঞতা পেতে পারি-

  •  আমরা আামাদের গাছটির পূর্বের অবস্থার সাথে শীতের সময়ের পার্থক্যটা বোঝার চেষ্টা করব। পার্থক্যগুলো নিয়ে একটি নতুন তালিকা তৈরি করতে পারি।
  • শুকনো পাতার উপর দিয়ে হাঁটা বা চলার অভিজ্ঞতা নিব। শুকনো পাতার যে ছন্দময় শব্দ হয় তা আমরা চাইলে বড়দের সহায়তা নিয়ে মোবাইলে ধারণ করে রাখতে পারি।

আমরা শীতের প্রকৃতি এবং শীতের সময়ে ভালোলাগার গাছটি দেখে শীত সম্পর্কে বাস্তব ধারণা আর গভীর অনুভূতি পেলাম। যে নতুন তালিকা বা যা কিছু বহুখাতার কাছে জমা রেখেছিলাম তা আমাদের কল্পনার সাথে মিলিয়ে পছন্দমতো শিল্পকলার যে কোনো একটি শাখায় সহজভাবে প্রকাশের চেষ্টা করব। আমাদের এই ভাবনার প্রকাশ নিয়ে আমরা সহপাঠীদের সাথেও আলোচনা করব।

 

এই অধ্যায়ে আমরা যা যা করতে পারি-

  •  গাছটি এঁকে গাছটি সম্পর্কে লিখে গাছের শুকনো পাতা, ছোট ডালনা, রঙিন কাগজ কেটে ছিড়ে তা দিয়ে কোলাজ তৈরি করব। কোলাজটি বন্ধু পাতায় আঠা দিয়ে লাগিয়ে গাছটির শীতের সময়ের রূপকে তুলে ধরতে পারি।
  • শীতের সময়ের বিভিন্ন রঙের করা পাতা, শুকনো ডাইনি দিয়ে কাগজে লাগিয়ে শীত গাছ প্রকৃতি/পাখি ইত্যাদি বিষয়ে পছন্দমতো কোলাজচিত্র তৈরি করতে পারি। তাছাড়া বিভিন্ন রঙের ঝরা পাতা কেটে আনা নিয়ে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের মনের মতো নকশা তৈরি করতে পারি।
  • আবার বিভিন্ন রকমের গাছের শুকনো পাতা, ফুল, শিকড়, ডালপালা, মাটি, বালিসহ নানা উপকরণ মিলিয়ে আমরা আমাদের মনের মতো বিভিন্ন কিছুর আকৃতিও বানাতে পারি।
  •  আমাদের মধ্য থেকে কেউ শীত নিয়ে তার পছন্দের গানটি গেয়ে শুনাতে পারি। কেউ কেউ শীতের অনুভূতি, শীতের গাছ, শীতের পাখি, শীতের প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয়কে নিয়ে নেচে অথবা অভিনয় করে দেখাতে পারি। কেউবা আবার শীত নিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো লিখে অথবা কোনো পছন্দের হতা বা কবিতা বলতে পারি।

 

‘শীত-প্রকৃতির রূপ' বিষয়টিতে নিজের অনুভূতি শিল্পকলার যে কোনো একটি শাখায় প্রকাশের পর আমরা শিক্ষকসহ সহপাঠীদের অনুভূতি ও মতামত জানব। অন্য সহপাঠীদের পরিবেশনের বিষয়ে সুন্দরভাবে নিজের অনুভূতি ও মতামত জানাব।

Content added By
Promotion